Brahma & Saraswati : Relation Explained! ব্রহ্মা-সরস্বতীঃ কেন পিতা কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন?

ব্রহ্মা-সরস্বতীঃ কেন পিতা কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন?
দেবী সরস্বতীকে সৃষ্টি করেছিলেন ব্রহ্মা। আবার এমন
কথিত আছে যে, পিতা ব্রহ্মা তার সেই কন্যা সরস্বতীকেই বিবাহ করেছিলেন। সমাজের চোখে নিষিদ্ধ এই সম্পর্ক নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। জেনে নেওয়া যাক কাহিনীটি।
কাহিনীটি এইরূপঃ
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রচনা করেছেন ব্রহ্মা।  বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আরো সুন্দর, আরো সুশৃঙ্খল বানিয়ে তুলতে জ্ঞানও দরকার। এমনকি, স্বয়ং ব্রহ্মারও সেই জ্ঞান খুবই প্রয়োজন যাতে ব্রহ্মাণ্ড আরো সুন্দর হয়।  সেই প্রয়োজনের তাগিদে তিনি সরস্বতীর সৃষ্টি করলেন। 
সরস্বতীকে সৃষ্টি করার পর ব্রহ্মা  তার প্রতি এতোটাই
আকৃষ্ট হয়ে পরেন যে তিনি তাকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু দেবী সরস্বতী একথা জেনে চতুর্দিকে পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন, তিনি  কিছুতেই ব্রহ্মার সামনে আসতে চাইছেন না। কিন্তু তার রূপে বিভোর ব্রহ্মা যেদিকে সরস্বতী যান, সেই দিকেই তাকানোর জন্য চারটি মুখমন্ডলের  সৃষ্টি করলেন। ব্রহ্মার দৃষ্টি এড়িয়ে আর তো পালানোর জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে দেবী সরস্বতী উর্দ্ধে গমন করলেন। কিন্তু তখন ব্রহ্মা তার পঞ্চম মুখমন্ডলের জন্ম দেন। ব্রহ্মার এমন ঊদ্ধত আচরণে ক্রধিত হয়ে মহাদেব শিব কালভৈরবকে পাঠান। কালভৈরব ব্রহ্মার পঞ্চম মুখমন্ডলটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।পরে ব্রহ্মা নিজ ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হয়ে পরেন। কিন্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আরো সুসজ্জিত করে তুলতে সরস্বতী তাকে বিবাহে রাজী হন। এবং স্বয়ম্ভু নামে মনুর জন্ম দেন। স্বয়ম্ভু হলেন প্রথম পুরুষ মানব। 

যদিও এই কাহিনী বিষ্ণুপুরাণ,  শিবপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, মার্কন্ডেয় পুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতে আমি পাইনি। এখানে সরস্বতীকে ব্রহ্মার কন্যা বর্ণিত রয়েছে। এমনও উল্লেখ রয়েছে যে, ব্রহ্মা সরস্বতী বা সন্ধ্যার প্রতি আকৃষ্ট হন, কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর হস্তক্ষেপে  তিনি নিজের ভুল শুধরে নেন।এছাড়াও স্বয়ম্ভু মনুর জন্ম সম্বন্ধে এক অন্য কাহিনী পাই। সেখানে তাকে ব্রহ্মার মানসপুত্র বলা হয়েছে অর্থ্যাৎ তিনি ব্রহ্মার মানস বা মন থেকে জন্ম নিয়েছেন। তিনি অর্ধেক পুরুষ, অর্ধেক নারী। তিনি নিজ দেহ থেকেই শতরূপার জন্ম দেন এবং শতরূপাকে বিবাহ করে মানব জাতির সম্প্রসারণ ঘটান।বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা পত্রিকা ঘেঁটে যা জানতে পারি, ব্রহ্মা এবং সরস্বতীর বিবাহ বিবাহ সংক্রান্ত কাহিনী হয়তো মৎস্যপুরাণ বা ব্রহ্মপুরাণে রয়েছে।

পিতার সাথে কন্যার বিবাহ এমন কাহিনী সভ্য মানব সমাজে কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, তা স্বীকৃতও নয়। তাই এই কাহিনী নানা মহলে কটু মন্তব্য,  সমালোচনার শিকার হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ এই কাহিনীকে দেব-লীলা বলে স্বযত্নে এড়িয়ে যান। কিন্তু একটু ভেবে দেখলে দেখা যাবে,  এই কাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা অন্তর্নিহিত এক অর্থ রয়েছে। ভারতীয় পুরাণের এই এক বৃহৎ মহত্ব। কাহিনীগুলি আদৌ বাস্তবিক কি না, তার কোনো প্রমাণ পাই না। অনেকক্ষেত্রে কাহিনী গুলি অতিরঞ্জিত, অতিকাল্পনিক মনে হয়। কিন্তু সব কাহিনীতেই ফল্গস্রোতা এক বার্তা রয়েছে।

ব্রহ্মা-সরস্বতীর এই কাহিনী কোন বার্তা বহন করে, সেই নিয়ে একটু আলোচনা করে দেখি।

ব্রহ্মা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সেই ব্রহ্মান্ড শ্রীহীন, বিশৃঙ্খল। তার সৃষ্টিকে সুন্দর করে তুলতে প্রয়োজন জ্ঞানের
আলো। তাই তিনি দেবী সরস্বতীকে সৃষ্টি করলেন। দেবী সরস্বতী আসলে এক শক্তি যে শক্তি জ্ঞানচক্ষু ঊন্মেলন করে দেয়, বিদ্যা দান করে। যে শক্তিকে তিনি উদ্ভাবন করলেন, সেই শক্তির অধিকারী তিনি নিজেই হতে চাইলেন। সেই শক্তির অধিকারী হতে পারলে তবেই ব্রহ্মান্ডকে সুন্দর করে তুলতে পারবেন তিনি।

কিন্তু সেই শক্তিকে পাওয়া কি অত সহজ! অনেক সাধনা করলে তবেই তো মা সরস্বতীর কৃপা লাভ হয়। তাই সেই শক্তিলাভের জন্য তিনি দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এই চেষ্টার ফলরূপে তার চার মস্তকের সৃষ্টি হয়েছে। আসলে তার এই চার মস্তক চার বেদকে বোঝায়। সরস্বতীরূপ শক্তির সাধনার ফল চার বেদ। আবার চার মস্তক চার দিককেও বোঝাতে পারে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিস্তার চার দিকে-উত্তর, দক্ষিন, পূর্ব, পশ্চিম। আবার, বিষয়টির ব্যাখ্যা এভাবেও করা যায়- চার মস্তক চার মাত্রিক অবস্থানকে বোঝায়- দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়।

এবার বিষয়টিকে আরো সহজ করে ভাবা যাক। হিন্দু ধর্মে আত্মার তিন গুণের কথা বলা রয়েছে- সত্য, রজঃ, তম। সত্য গুণ সৃষ্টি বোঝায়। ব্রহ্মা সেই সত্য গুণের প্রতীক। রজঃ গুণ সৃষ্টির রক্ষা ও পালন বোঝায়। ভগবান বিষ্ণু সেই গুণকে  বোঝায়। তম গুণ ধ্বংসাত্মক বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। ভগবান শিব এই গুণের অধিকারী।   এই গুণ দ্বারা কোনো খারাপ অধর্ম বিষয়ের বিনাশ হয়।

একজন মানুষের মধ্যেও এই তিন গুণ রয়েছে। সত্য গুণের অধিকারী  মানুষের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা থাকে বটে কিন্তু সেই সৃষ্টিশীলতা বাস্তবিক পরিপূর্ণতা তখনই পায় যখন প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে। শিক্ষা, বিদ্যার স্পর্শে তার সেই সৃষ্টিশীলতা আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। সৃষ্টির বীজ প্রথিত হয় জ্ঞানশক্তির জঠরে। তাদের দুইএর যথার্থ মিলনে জন্ম নেয় নতুন সৃষ্টিশীলতা। তা হতে পারে সাহিত্য, কোনো কবিতা, কোনো উপন্যাস। আবার হতে পারে কোনো নতুন বিজ্ঞান বিষয়ক আবিষ্কার।  

এবার বলি, পঞ্চম মস্তকের কথায়। চারটি মস্তক সৃষ্টি হওয়ার পর আর একটি মস্তক যখন সৃষ্টি হল, মহাদেব শিবের আদেশে কালভৈরব তা ছিন্ন করেন। 

আসলে, চতুর্বেদ প্রাপ্ত হয়ে ব্রহ্মা আত্ম অহংকারী হয়ে পড়েন। তখন মহাদেব তমগুণে সেই অহংকারে চূর্ণ করেন। 
সৃষ্টির সফলতার আনন্দে মত্ত মানুষ অহংকারী হয়ে পড়তে পারে। সেই অহংকার তার পতনের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই আত্মার তম গুণে সেই অহংকার বিনাশ করতে হবে। 
এপ্রসঙ্গে রুডয়ার্ড কিপলিং এর  "IF" কবিতার সেই বিখ্যাত বাক্যদ্বয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই

if you can meet with triumph and disaster 
and treat those two impostors just the same

Comments

Popular Stories on this blog

Ramayan Written by Lady Poet : Chandravati Ramayan চন্দ্রাবতী এবং প্রথম মহিলা কবির লেখা বাংলা রামায়ণ "চন্দ্রাবতী রামায়ণ"

গ্রীক মিথলজি গল্প: পার্সিফোনি এবং হেডেস

ভারতীয় পুরাণে রয়েছে মানব বিবর্তনের কাহিনী