ভারতীয় পুরাণে রয়েছে মানব বিবর্তনের কাহিনী
✴ভারতীয় পুরাণে রয়েছে মানব বিবর্তনের কাহিনী ✴
🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹
🚩 পৃথিবীতে মানুষ কিভাবে এল এই নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়ে তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে একের পর এক নতুন নতুন তথ্য উন্মোচন হয়ে চলেছে। তবে একটি বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে, পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার মানুষ দ্বারা হয়নি। অন্য প্রাণী থেকে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে আদিম হোমো হ্যাবিলিস (Homo habilis) থেকে আধুনিক হোমো সেপিয়েন্স মানুষের উৎপত্তি হয়েছে। এই নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানে নানা মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু প্রাচীন ভারতীয় পুরাণ আজ থেকে প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ বছর আগে মানব বিবর্তনের ধারনা লিপিবদ্ধ হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় পুরাণে। মৎস্যপুরাণ, অগ্নিপুরাণ, গরুড়পুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ইত্যাদি প্রাচীন হিন্দুধর্মগ্রন্থে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর প্রধান দশ অবতারের উল্লেখ পাই। এএই দশ অবতারগুলিকে পর্যবেক্ষন করলে আমরা দেখতে পাব, এই দশ অবতারের মধ্যেই রয়েছে মানব বিবর্তনের ইতিহাস। আসুন, কিভাবে এই দশ অবতারের মধ্যে থেকে মানব বিবর্তনের ধারাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
🔶প্রথম অবতারঃ মৎস্য (FISH- aquatic animal)
আধুনিক বিজ্ঞানে বিবর্তনের সবচেয়ে প্রচলিত মত অনুসারে, পৃথিবীতে প্রথম জলজ উনুন্নত কিছু প্রাণীর উদ্ভব হয়েছিল। তারপর বিবর্তনের কারণে জলের উন্নত প্রাণী যেমন মাছের উৎপত্তি হল।
🔶 দ্বিতীয় অবতারঃ কূর্ম বা কচ্ছপ ( Tortoise-amphibian)
মাছ জাতীয় জলের প্রাণীগুলি থেকে বিবর্তনের ফলে উভচর প্রাণী (যেমন কচ্ছপ) জন্মালো যারা জল এবং ডাঙ্গা উভয় স্থানেই বসবাস করতে পারে।
🔶তৃতীয় অবতারঃ বরাহ (Boar- land mammals)
জলচর প্রাণী থেকে ক্রমবিবর্তনের ফলে উভচর এবং সেই উভচর থেকে স্থলভাগে বসবাসের উপযুক্ত চার পদ যুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সৃষ্টি হল।
🔶 চতুর্থ অবতারঃ নৃসিংহ (Half Lion-half human)
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে উন্নত কিছু বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে ক্রমশ মানুষের বিকাশ ঘটতে শুরু হল। লক্ষ্যনীয় বিষয়, নৃসিংহ অবতারের মধ্যে সম্পূর্ণ মানুষের আকৃতি প্রকাশ পায় না। চতুষ্পদী মেরুদন্ডী প্রাণী দুই পায়ে ভর দিয়ে সাবলীল দাঁড়াতে পারছে। হাতের ব্যবহার শিখেছে।
🔶পঞ্চম অবতারঃ বামন (Dwarf Man)
এই অবতারটি বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারব, বিবর্তনের ফলে পরিবর্তনশীল মানব-পশুর চেহারা সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষের আকার পেয়েছে। উচ্চতায় কমে গিয়েছে। খেয়াল করুন, আগের অবতার অর্থাৎ নৃসিংহ অবতারে মানুষ অনেকটাই উচ্চ আকৃতির, বৃহৎ চেহারার ছিল। কিন্তু বামন অবতারে তার দেহের আকার সবদিক থেকেই কমেছে। বিবর্তিত হতে হতে অনেকটা আধুনিক Homo sapiens মানুষের আকার পেয়েছে।
🔶 ষষ্ঠ অবতারঃ পরশুরাম (Parasuram- human with weapon)
এই অবতারে মানুষ অস্ত্রের ব্যবহার শিখে নিয়েছে। পরশুরামের প্রিয় অস্ত্র কুঠার। সেই অস্ত্র দিয়ে তিনি ২১ বার ক্ষত্রিয় নিধন করেছিলেন। এই রক্তাক্ত কাহিনী যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ডারউইনের সেই বিখ্যাত মতবাদ: যোগ্যতমের উৎবর্তন। আধুনিক মানুষ অস্ত্রের ব্যবহার শিখে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে।
🔶সপ্তম অবতারঃ রাম (Ram- social justice)
সপ্তম অবতারে রাম সমাজবদ্ধ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। এক সময় মানুষ একে অপরকে মেরে নিজে বেঁচে থাকতে চেয়েছে। কিন্তু তারপর মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে,ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, সামাজিক, পারিবারিক নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে শিখেছে।
🔶 অষ্টম অবতারঃ কৃষ্ণ (social relation)
একা মানুষ ক্রমশ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে। এর পর সামাজিক, পারস্পরিক বোঝাপড়া আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এক গোষ্ঠীর সাথে অন্য গোষ্ঠীর দেওয়া নেওয়া, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিনিময়, আদানপ্রদান এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
🔶 নবম অবতারঃ বুদ্ধ (Humanity, love & inner spirituality)
একে অপরের সাথে পারস্পরিক মতামত, সংস্কৃতি দেওয়া-নেওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে মানবতা, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি বাড়তে থাকে। লড়াইয়ের পথ, হিংসা ত্যাগ করে শান্তির সন্ধান করতে থাকে মানবজাতি।
🔶 দশম অবতারঃ কল্কি (destruction)
হিন্দু ধর্মপুরাণগুলিতে এই অবতারকে ধ্বংসের লক্ষন দেখানো হয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী, কল্কি অবতারের সাথে কলিযুগের সমাপ্তি ঘটবে এবং কল্কি অবতারে দুষ্টের দমন করবেন বিষ্ণু এবং আবার ন্যায় এবং ধর্মস্থাপন করবেন।
এই অবতার এখনো আসেনি। তাই এই অবতারের সাথে সরাসরি মানব বিবর্তনের যোগ খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তবে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। বিজ্ঞান বলছে, সব প্রাণীর মত মানুষের বিবর্তনও থেমে নেই, সেই ধারা এখনো চলছে। একসময় এই বিবর্তনের ফলে মানুষের শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন আসবে যা তাদের দানবীয় করে তুলবে। ব এমনো হতে পারে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, যোগ্যতমের উৎবর্তন এবং খাদ্য-খাদক সম্পর্কের সংকটের কারণে কিছু মানুষের দেহে ভয়ংকর কোনো বিবর্তনগত পরবর্তন আসতে পারে যা বাকী মানবজাতিকে সংকটে ফেলতে পারে। সেইজন্য সেইসকল "অতিমানব" দের দমন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।
আমাদের প্রাচীন পুরাণগ্রন্থগুলির মধ্যে এইরকম আর কত রহস্য লুকিয়ে আছে! আশা করি, আগামী দিনে ভারতীয় পুরাণ থেকেই আরো নতুন নতুন প্রাচীন রহস্য উন্মোচিত হবে, হয়তো সারা বিশ্বে প্রচলিত অনেক ধ্যান-ধারণাই বদলে যাবে। কে বলতে পারে, মানব সভ্যতার ইতিহাস হয়তো নতুন করে লিখতে হতে পারে।
©Knowledge Tree
Image: Dashavatar Cards (courtesy: https://www.biswabangla.in)
🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹
🚩 পৃথিবীতে মানুষ কিভাবে এল এই নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়ে তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে একের পর এক নতুন নতুন তথ্য উন্মোচন হয়ে চলেছে। তবে একটি বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে, পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার মানুষ দ্বারা হয়নি। অন্য প্রাণী থেকে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে আদিম হোমো হ্যাবিলিস (Homo habilis) থেকে আধুনিক হোমো সেপিয়েন্স মানুষের উৎপত্তি হয়েছে। এই নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানে নানা মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু প্রাচীন ভারতীয় পুরাণ আজ থেকে প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ বছর আগে মানব বিবর্তনের ধারনা লিপিবদ্ধ হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় পুরাণে। মৎস্যপুরাণ, অগ্নিপুরাণ, গরুড়পুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ইত্যাদি প্রাচীন হিন্দুধর্মগ্রন্থে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর প্রধান দশ অবতারের উল্লেখ পাই। এএই দশ অবতারগুলিকে পর্যবেক্ষন করলে আমরা দেখতে পাব, এই দশ অবতারের মধ্যেই রয়েছে মানব বিবর্তনের ইতিহাস। আসুন, কিভাবে এই দশ অবতারের মধ্যে থেকে মানব বিবর্তনের ধারাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
🔶প্রথম অবতারঃ মৎস্য (FISH- aquatic animal)
আধুনিক বিজ্ঞানে বিবর্তনের সবচেয়ে প্রচলিত মত অনুসারে, পৃথিবীতে প্রথম জলজ উনুন্নত কিছু প্রাণীর উদ্ভব হয়েছিল। তারপর বিবর্তনের কারণে জলের উন্নত প্রাণী যেমন মাছের উৎপত্তি হল।
🔶 দ্বিতীয় অবতারঃ কূর্ম বা কচ্ছপ ( Tortoise-amphibian)
মাছ জাতীয় জলের প্রাণীগুলি থেকে বিবর্তনের ফলে উভচর প্রাণী (যেমন কচ্ছপ) জন্মালো যারা জল এবং ডাঙ্গা উভয় স্থানেই বসবাস করতে পারে।
🔶তৃতীয় অবতারঃ বরাহ (Boar- land mammals)
জলচর প্রাণী থেকে ক্রমবিবর্তনের ফলে উভচর এবং সেই উভচর থেকে স্থলভাগে বসবাসের উপযুক্ত চার পদ যুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সৃষ্টি হল।
🔶 চতুর্থ অবতারঃ নৃসিংহ (Half Lion-half human)
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে উন্নত কিছু বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে ক্রমশ মানুষের বিকাশ ঘটতে শুরু হল। লক্ষ্যনীয় বিষয়, নৃসিংহ অবতারের মধ্যে সম্পূর্ণ মানুষের আকৃতি প্রকাশ পায় না। চতুষ্পদী মেরুদন্ডী প্রাণী দুই পায়ে ভর দিয়ে সাবলীল দাঁড়াতে পারছে। হাতের ব্যবহার শিখেছে।
🔶পঞ্চম অবতারঃ বামন (Dwarf Man)
এই অবতারটি বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারব, বিবর্তনের ফলে পরিবর্তনশীল মানব-পশুর চেহারা সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষের আকার পেয়েছে। উচ্চতায় কমে গিয়েছে। খেয়াল করুন, আগের অবতার অর্থাৎ নৃসিংহ অবতারে মানুষ অনেকটাই উচ্চ আকৃতির, বৃহৎ চেহারার ছিল। কিন্তু বামন অবতারে তার দেহের আকার সবদিক থেকেই কমেছে। বিবর্তিত হতে হতে অনেকটা আধুনিক Homo sapiens মানুষের আকার পেয়েছে।
🔶 ষষ্ঠ অবতারঃ পরশুরাম (Parasuram- human with weapon)
এই অবতারে মানুষ অস্ত্রের ব্যবহার শিখে নিয়েছে। পরশুরামের প্রিয় অস্ত্র কুঠার। সেই অস্ত্র দিয়ে তিনি ২১ বার ক্ষত্রিয় নিধন করেছিলেন। এই রক্তাক্ত কাহিনী যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ডারউইনের সেই বিখ্যাত মতবাদ: যোগ্যতমের উৎবর্তন। আধুনিক মানুষ অস্ত্রের ব্যবহার শিখে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে।
🔶সপ্তম অবতারঃ রাম (Ram- social justice)
সপ্তম অবতারে রাম সমাজবদ্ধ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। এক সময় মানুষ একে অপরকে মেরে নিজে বেঁচে থাকতে চেয়েছে। কিন্তু তারপর মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে,ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, সামাজিক, পারিবারিক নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে শিখেছে।
🔶 অষ্টম অবতারঃ কৃষ্ণ (social relation)
একা মানুষ ক্রমশ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে। এর পর সামাজিক, পারস্পরিক বোঝাপড়া আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এক গোষ্ঠীর সাথে অন্য গোষ্ঠীর দেওয়া নেওয়া, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিনিময়, আদানপ্রদান এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
🔶 নবম অবতারঃ বুদ্ধ (Humanity, love & inner spirituality)
একে অপরের সাথে পারস্পরিক মতামত, সংস্কৃতি দেওয়া-নেওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে মানবতা, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি বাড়তে থাকে। লড়াইয়ের পথ, হিংসা ত্যাগ করে শান্তির সন্ধান করতে থাকে মানবজাতি।
🔶 দশম অবতারঃ কল্কি (destruction)
হিন্দু ধর্মপুরাণগুলিতে এই অবতারকে ধ্বংসের লক্ষন দেখানো হয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী, কল্কি অবতারের সাথে কলিযুগের সমাপ্তি ঘটবে এবং কল্কি অবতারে দুষ্টের দমন করবেন বিষ্ণু এবং আবার ন্যায় এবং ধর্মস্থাপন করবেন।
এই অবতার এখনো আসেনি। তাই এই অবতারের সাথে সরাসরি মানব বিবর্তনের যোগ খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তবে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। বিজ্ঞান বলছে, সব প্রাণীর মত মানুষের বিবর্তনও থেমে নেই, সেই ধারা এখনো চলছে। একসময় এই বিবর্তনের ফলে মানুষের শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন আসবে যা তাদের দানবীয় করে তুলবে। ব এমনো হতে পারে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, যোগ্যতমের উৎবর্তন এবং খাদ্য-খাদক সম্পর্কের সংকটের কারণে কিছু মানুষের দেহে ভয়ংকর কোনো বিবর্তনগত পরবর্তন আসতে পারে যা বাকী মানবজাতিকে সংকটে ফেলতে পারে। সেইজন্য সেইসকল "অতিমানব" দের দমন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।
আমাদের প্রাচীন পুরাণগ্রন্থগুলির মধ্যে এইরকম আর কত রহস্য লুকিয়ে আছে! আশা করি, আগামী দিনে ভারতীয় পুরাণ থেকেই আরো নতুন নতুন প্রাচীন রহস্য উন্মোচিত হবে, হয়তো সারা বিশ্বে প্রচলিত অনেক ধ্যান-ধারণাই বদলে যাবে। কে বলতে পারে, মানব সভ্যতার ইতিহাস হয়তো নতুন করে লিখতে হতে পারে।
©Knowledge Tree
Image: Dashavatar Cards (courtesy: https://www.biswabangla.in)
Comments
Post a Comment