Krishna Dwaipayan Vedvyas

ইনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন নামে বিখ্যাত এবং বেদ বিভাগকর্তা। ইনি এক বেদকে শতশাখাযুক্ত চার ভাগে বিভক্ত করে বেদব্যাস নামে অভিহিত হন। ইনি বশিষ্ঠের প্রপৌত্র, শক্ত্রির পৌত্র, পরাশরের পুত্র ও শুকদেবের পিতা। এঁর মাতার নাম সত্যবতী। বর্ণ কৃষ্ণ ও দ্বীপে জন্ম বলে এঁর নাম কৃষ্ণদ্বৈপায়ন। ইনি মহাভারত, অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ, বেদান্তদর্শন এবং ভাগবত রচনা করেন। ব্যাসসংহিতা এঁর স্মৃতি, বেদান্ত এঁর দর্শন এছাড়া পাতঞ্জল দর্শনের উৎকৃষ্ট টীকাও ইনি প্রণয়ন করেন। কথিত আছে, মহাভারত লিপিবদ্ধ করবার জন্য ব্যাস ব্রহ্মার কাছে উপদেশ নিতে গেলে ব্রহ্মা বলেন যে, গণেশই মহাভারতের লিপিকার হবেন। গণেশ এই শর্তে লিপিকার হতে সম্মত হন যে, তাঁর লেখনী ক্ষণমাত্রও থামবে না। 

ব্যাস ভাবলেন যে, তাঁর রচনায় আট হাজার আট শত এমন শ্লোক আছে যার অর্থ গণেশ বুঝতে পারবেন কিনা সন্দেহ। ব্যাসও তাই গণেশকে বললেন, আমি যা বলে যাবো, আপনি তার অর্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না।’ এতে গণেশ সম্মত হন। গণেশ সর্বজ্ঞ হলেও কঠিণ শ্লোক লেখবার সময় তাঁকে সময়ে সময়ে বিশেষ চিন্তা করতে হত, এবং সেই অবসরে ব্যাস বহু শ্লোক মনে মনে রচনা করে নিতেন।

একদিন মৎস্যগন্ধা সত্যবতী পিতার আদেশে যমুনায় নৌকা পারাপার করছিলেন, এমন সময় ঋষি পরাশর পারাপারের জন্য সেই নৌকায় ওঠেন। রূপবতী মৎস্যগন্ধাকে দেখে পরাশর অত্যন্ত কামাতুর হয়ে পড়লেন এবং তাঁর সঙ্গম প্রার্থনা করলেন, এইরূপ স্থানে ও সময়ে মৎস্যগন্ধা সঙ্গমকার্যে আপত্তি প্রকাশ করলে, পরাশর কুজ্ঝটিকার সৃষ্টি করে মৎস্যগন্ধাকে জানালেন যে, তাঁর সঙ্গে সঙ্গমের ফলে মৎস্যগন্ধার কুমারীভার দূষিত হবে না। পরাশর আরও বর দিলেন যে, মৎস্যগন্ধা সুগন্ধাযুক্তা হবেন। এই সঙ্গমের ফলে কৃষ্ণদ্বৈপায়নের জন্ম হয়। ব্যাস-জননী মৎস্যগন্ধা পরে সত্যবতী নামে পরিচিত হন। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন জন্মমাত্র মাতার অনুমতি নিয়ে তপস্যায় রত হন এবং মাতাকে বলে যান যে, কোন বিশেষ প্রয়োজনে তাঁকে স্মরণ করলেই তিনি মাতার কাছে উপস্থিত হবেন।

সত্যবতীর সঙ্গে মহারাজ শান্তনুর বিবাহ হয়। তাঁর গর্ভজাত পুত্র চিত্রাঙ্গদ অল্প বয়সে ও বিচিত্রবীর্য নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোকগমণ করলে, সত্যবতীর অনুরোধে ব্যাস বিচিত্রবীর্যের স্ত্রী অম্বিকা ও অম্বালিকার গর্ভে যথাক্রমে ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুকে উৎপাদন করেন। সঙ্গমকালে ব্যাসের দীপ্ত নয়ন, কৃষ্ণ বর্ণ ও পিঙ্গল জটাজুট দেখে অম্বিকা ভয়ে চক্ষু নিমীলিত করেন। ফলে, ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হন। ভয়ে অম্বালিকা পাণ্ডুবর্ণ হয়ে যান বলে পাণ্ডুও পাণ্ডুবর্ণ হন। সত্যবতী অম্বিকাকে পুনর্বার ব্যাসের কাছে যেতে বললে, তিনি ভয়ে তাঁর এক সুন্দরী দাসীকে ব্যাসের কাছে পাঠিয়ে দেন। ব্যাস এই দাসীর গর্ভে বিদুরকে উৎপাদন করেন। মহাভারতের নানা ঘটনায় ব্যাস স্বয়ং জড়িত ছিলেন। ব্যাসের বিধান অনুযায়ীই পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদীকে বিবাহ করেন। এঁর বরে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকালে সঞ্জয় দিব্যুচক্ষু লাভ করেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে অনুপস্থিত থেকেও ধৃতরাষ্ট্রের কাছে যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে সমর্থ হন। ধৃতরাষ্ট্রাদির প্রার্থনায় ইনি যোগবলে যুদ্ধে মৃত ভীষ্মাদিকে দর্শন করিয়ে তাঁদের পিতা, মাতা ও স্ত্রীদের প্রীত করান এবং ধৃতরাষ্ট্রকে দিব্যচক্ষু দান করেন। ব্যাসদেব কৌরব ও পাণ্ডবদের পরম হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। নানা বিপদকালে ইনি তাঁদের উপদেশ দিয়ে উপকৃত করতেন। কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধের পর ইনি পাণ্ডবদের ও ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী প্রভৃতিকে নানা প্রকার সান্ত্বনা ও সংশয়চ্ছেদক উপদেশ দেন। যে সকল বিবরণ মহাভারতের স্ত্রী, শান্তি, অনুশাসন, অশ্বমেধ ও স্বর্গারোহনপর্বে দেখা যায়।

একবার এক অপ্সরাকে দেখে ব্যাসদেবের রেতঃপাত হয়। অপ্সরা ভীত হয়ে শুকপক্ষীর আকার ধারণ করে পালিয়ে যান। এই রেতঃপাত থেকে শুকদেবের জন্ম হয়। রেতঃপাতের পর তিনি শুকপক্ষীকে দেখেছিলেন বলে এই পুত্রের নাম রাখেন শুকদেব। বেদ বিভাগ ও মহাভারত রচনা ব্যতীত বেদব্যাস বেদান্তদর্শনও রচনা করেন। পুরাণে ব্যাস শ্রীকৃষ্ণের অংশ বলে প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন পুরাণ আলোচনা করলে দেখা যায় যে, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ভিন্ন ভিন্ন কল্পে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁদের বিষ্ণু ও ব্রহ্মার স্বরূপ বলা হতো। কল্পে কল্পে শর্মের অবনতি দেখে ধর্মরক্ষার জন্য ভগবান ব্রহ্মা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসরূপে অবতীর্ণ হয়ে বেদ-রক্ষা ও বেদ বিভাগ করে প্রচার করেছেন। ব্যাস ব্যক্তিবিশেষের নাম নয় – বেদ বিভাগকারী ঋষিদের সম্মানসূচক উপাধি। তবে বেদব্যাসের উল্লেখে খুব সম্ভর একমাত্র বেদ বিভাগকর্তা এই বেদব্যাসকেই বোঝায়। এই বেদ বিভাগ করে, ইনি সুমন্ত, জৈমিনি, পৈল, বৈশম্পায়ন ও পুত্র শুকদেবকে অধ্যয়ন করান এবং মহাভারত সম্বন্ধেও এঁদের উপদেশ দেন। তারপর লোমহর্ষণ মুনিকে ইনি ইতিহাস ও পুরাণপাঠের শিষ্য বলে গ্রহণ করেন। ইনি চিরজীবীদের অন্যতম।

Comments

Popular Stories on this blog

Brahma & Saraswati : Relation Explained! ব্রহ্মা-সরস্বতীঃ কেন পিতা কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন?

একই দেহে মাতা-পিতা ( Mother & Father both are one person)

গ্রীক মিথলজি গল্প: পার্সিফোনি এবং হেডেস