Story of Sage Chyavana & Ashwini Kumar Twins : Making of Chyawanprash

 

১৯৬৭ সালে শ্রী বিষ্ণু পিকচার্স প্রাঃ লিঃ এর ব্যানারে শ্রী জয়দ্রথের পরিচালনায় মুক্তি পেল গৌর মীরের লেখা "যযাতির স্বপ্ন" অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা "আশিতে আসিও না"। মুখ্য চরিত্রে বৃদ্ধ সদানন্দের ভূমিকায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় রুমা গুহ ঠাকুরদা। হাসি-মজায় ভরা এই সিনেমাটি দেখেননি এমন বাঙালীর নেই বললেই চলে।

সিনেমাটিতে আমরা দেখেছি, বৃদ্ধ সদানন্দ এক দৈব ক্ষমতাসম্পন্ন পুকুরে ডুব দিতেই আবার তার যৌবন বয়স ফিরে পেলেন। ব্যাপারটা বেশ আজগুবি, কাল্পনিক মনে হয়েও রসবোধ সম্পন্ন সিনেমাপ্রেমী বাঙালীর মনে এক চিরস্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। প্রায় চল্লিশ বছর আগের একটি সিনেমা আজকের যুগেও তার যৌবন ধরে রেখেছে।
এতো গেল সিনেমার কথা। জানলে অবাক হবেন, আমাদের প্রাচীন পুরাণ-গ্রন্থেও এমন এক কাহিনীর উল্লেখ আছে যেখানে এক পুকুরে স্থান করলেই বার্ধক্য, জরাবস্থা কেটে সতেজ, সুস্বাস্থ্য  ফিরে আসে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেই কাহিনী।

এই কাহিনীটির উল্লেখ পাই শ্রীমদ্ভাগবত এবং মহাভারতের বনপর্বে। এই পেজের আগের পোস্টে চ্যবনমুণির জন্মের কথা বলেছি। সেই ঋষি চ্যবন ধ্যান-তপস্যার দ্বারা এক শক্তিশালী ঋষিপুরুষে পরিনত হন।

মহাভারতে বনপর্বে প্রভাসতীর্থ থেকে পান্ডবরা এলেন নর্মদা নদী তীরে বৈদূর্য্য পর্বতে (এখনকার মধ্যপ্রদেশের ভেদাঘাট)। সেখানে ঋষি লোমশ তাদের চ্যবনমুণির আশ্রম চিনিয়ে দিলেন এবং চ্যবনমুণির কাহিনী বর্ণনা করলেন।
এই কাহিনীটি শ্রীমদ্ভাগবত বা ভাগবতপুরাণেও উল্লেখ আছে ।
মুণি চ্যবন দীর্ঘকাল যাবৎ তপস্যা করছিলেন। তিনি এমন কঠোর তপস্যা করছিলেন যে তার শরীর পিঁপড়ে বা বল্মীক, লতাপাতা দ্বারা আবৃত হয়ে গিয়েছিল।
একদিন সেই আশ্রমস্থলে শিকারে এলেন বৈবস্বত মনুর পুত্র রাজা শর্যাতি। রাজার সাথে এলেন তার সেনাদল, রানীরা এবং সুন্দরী রাজকন্যা সুকন্যা। রাজা আগে ভাগেই তার দলবলকে চ্যবনমুণির আশ্রমে প্রবেশে নিষেধ করেন। কারণ, তিনি জানতেন, মুণি সেখানে ধ্যানমগ্ন, তার ধ্যানে বিঘ্ন ঘটলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেবেন। সেই শুনে রাজার সঙ্গীসাথীরা কেউ ভয়ে আশ্রমের ধারে কাছে ঘেঁষল না। কিন্তু রাজার সেই সাবধানবাণী রাজকন্যা সুকন্যা শুনতে পেল না। সে তার সখীদের নিয়ে সেই আশ্রমে প্রবেশ করল। আশ্রমের ভিতরের পরিবেশ কি অদ্ভুত! সব কিছু শান্ত। এক আনন্দময় শান্তি বিরাজমান সেখানে। হরিণশিশুরা নির্ভয়ে বিচরণ করছে সেখানে। এই সুন্দর আশ্রম দেখে সুকন্যার খুশি হলেন। সেখানেই পিপীলিকা এবং লতাপাতা ঢাকা অবস্থায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন চ্যবন। শুধুমাত্র তার চোখদুটি দেখা যাচ্ছে। বাকী শরীর যেন এক সাদা স্তুপে পরিনত হয়েছে।

রাজকুমারী সুকন্যার নজরে পড়ল সেই স্তুপ। কৌতুহলী হয়ে তিনি স্তুপটির কাছে এসে দাঁড়ালেন। স্তুপের মধ্যে অনাবৃত চোখদুটি তাকে আরো অবাক করল। কৌতূহলের বশে সুকন্যা একটি কাঁটা চ্যবনের চোখে ঢুকিয়ে দিলেন। সাথে সাথে রক্তাক্ত চ্যবন যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠলেন। ক্রুদ্ধ চ্যবন মন্ত্রবলে রাজার বাহিনীর উপর মল-মূত্র ছড়িয়ে দিতে লাগলেন। রাজা বুঝলেন, নিশ্চয়ই কেউ চ্যবনের ধ্যানভঙ্গ করেছে।

তিনি ছুটে গেলেন চ্যবনের আশ্রমে। সেখানে তাকে রক্তাক্ত দেখে রাজা অবাক হলেন। তিনি চ্যবনের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে এই রক্তাক্ত অবস্থার কারণ জানতে চাইলেন। রাজা আরো অবাক হলেন যখন তিনি জানতে পারলেন তার কন্যা সুকন্যাই এই অঘটন ঘটিয়েছেন। এমতাবস্থায় রাজা চ্যবনমুণির কাছে প্রায়শ্চিত্তের উপায় জানতে চাইলেন। চ্যবনমুণি বললেন, তার এই অন্ধত্ব অবস্থার জন্য দায়ী সুকন্যা। তাই আগামীদিনে তার শারীরিক অক্ষমতার জন্য সুকন্যা তার সেবা করবে। সেই জন্য চ্যবনমুণি সুকন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। রাজা উপায় না দেখে সেই প্রস্তাবে রাজী হলেন। যথা সময়ে চ্যবন এবং সুকন্যার বিবাহ সম্পন্ন হল। দীর্ঘ তপস্যার কারণে চ্যবনমুণির শরীর ভেঙে পড়েছিল। বার্দ্ধক্য গ্রাস করেছিল তাকে। তবে সুকন্যা বেশ সুখেই স্বামীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখল।

মহাভারত অনুসারে, স্বর্গচিকিৎসক অশ্বিনীকুমারদ্বয় সুকন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে সুকন্যাকে প্রস্তাব দিলেন, জরাগ্রস্ত স্বামীকে ত্যাগকরে তাদের দুইভাইকে বিবাহ করতে। কিন্তু সুকন্যা এই প্রস্তাবে রাজী হলেন না। অবশেষে অশ্বিনীকুমারদ্বয় প্রস্তাব দিলেন, তারা দুইজনে চ্যবনকে আবার যৌবন ফিরিয়ে দেবেন। তারপর তিনজনের মধ্যে থেকে সুকন্যা একজনকে স্বামী রূপে বেছে নেবেন।

স্বামীর কথা ভেবে সুকন্যা এই প্রস্তাব মেনে নিলেন।
শ্রীমদ্ভাগবতে একটু অন্যভাবে বলা আছে। অশ্বিনীকুমারদ্বয় দেবতাদের চিকিৎসক হলেও তারা সোমরসের ভাগ পেতেন না। তাই সোমরস পাওয়ার আশায় তারা চ্যবনমুণির কাছে এসেছিলেন। সেখানে চ্যবনমুণির স্বাস্থ্যের এই দশা দেখে তারা চ্যবনমুণিকে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। বদলে সোমরসের অধিকার চান। চ্যবনমুণি এই প্রস্তাবে রাজী হলেন।

প্রতিশ্রুতি মত দুইভাই চ্যবনমুণিকে এক পুকুরে নিয়ে গেলেন। সেই পুকুরের জল নানা জড়িবুটি দ্বারা এক মহৌষধি ছিল। তারা তিনজনে সেই জলে ডুব দিলেন। যখন জল থেকে উঠলেন, তারা তিনজনেই একই রকম দেখতে স্বাস্থ্যবান যুবকে পরিনত হয়েছেন। এবার সেই দুইভাই সুকন্যার এক পরীক্ষা নিলেন। তারা তিনজনের মধ্যে থেকে চ্যবনমুণিকে বেছে নিতে

বললেন। পতিব্রতা সুকন্যা সঠিকভাবেই চ্যবনকে চিহ্নিত করলেন। স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চ্যবনও দুই ভাইকে সোমরস পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। চ্যবনের অনুরোধে রাজা শর্যাতি এক যজ্ঞের আয়োজন করলেন। সেই যজ্ঞ দ্বারা প্রাপ্ত সোমরস অশ্বিনীকুমারদ্বয় পাবেন। কিন্তু ইন্দ্র চ্যবনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে যজ্ঞ আক্রমণ করলেন। কিন্তু চ্যবন ইন্দ্রের সব শক্তি প্রতিহত করলেন।

মহাভারতে এইস্থানে একটু অন্য কাহিনীর উল্লেখ আছে। ইন্দ্রকে পরাজির করতে চ্যবন যজ্ঞ  থেকে মদ নামক এক মহাশক্তিশালী পুরুষের জন্ম দিলেন। মদকে দেখে ভীত হয়ে ইন্দ্র অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে সোমরস দিতে রাজী হলেন। তখন চ্যবন মদকে দ্যুতক্রীড়া,  সুরা, স্ত্রী, মৃগয়া- এই চার ভাগে ভাগ করে দিলেন। অশ্বিনীকুমারদ্বয় খুশি হয়ে ফিরে গেলেন। চ্যবনমুণি সুকন্যাকে নিয়ে আশ্রমে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন।।

🔸কেমন লাগল কাহিনীটি? অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানান। ভালো লাগলে পরিচিতদের মধ্যে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ 🙏   

© 🅺🅽🅾🆆🅻🅴🅳🅶🅴 🆃🆁🅴🅴


Comments

Popular Stories on this blog

Brahma & Saraswati : Relation Explained! ব্রহ্মা-সরস্বতীঃ কেন পিতা কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন?

একই দেহে মাতা-পিতা ( Mother & Father both are one person)

গ্রীক মিথলজি গল্প: পার্সিফোনি এবং হেডেস