Asura Born from God: Narakasura ইশ্বরের পুত্র নরকাসুর
𝕬𝖘𝖚𝖗𝖆 𝖇𝖔𝖗𝖓 𝖋𝖗𝖔𝖒 𝕲𝖔𝖉:ɴᴀʀᴀᴋᴀsᴜʀᴀ ইশ্বরের পুত্র নরকাসুর
আশ্বিনের শুক্লপক্ষের দশমী তিথি অর্থাৎ বিজয়া দশমীর দিন শ্রী রামচন্দ্র রাবণকে বধ করেছিলেন। কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার পরের অমাবস্যার দিন ১৪ বছর বনবাসে কাটিয়ে স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণের সাথে অযোধ্যায় ফিরছেন প্রভু রাম। অমাবস্যার সেই রাত দীপাবলির আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে। তবে দিনটি উৎযাপন করার আর একটি কারণও আছে। সেটিও এক বিজয় উৎসব। দ্বাপরযুগে দীপাবলী অমাবস্যার আগের দিন অর্থাৎ চতুর্দশীর দিন প্রাগজ্যোতিষপুরে (আসাম) নরকাসুরকে হত্যা করেন শ্রীকৃষ্ণ। দীপাবলীর উৎসব শুরু হয় ত্রয়োদশীর দিন, ধনতেরাস পালনের মাধ্যমে। দ্বিতীয় দিনটি নরক চতুর্দশী (পরের দিন অমাবস্যা/দিওয়ালী, চতুর্থ দিন গোবর্ধন পূজা, পঞ্চমদিন ভাইফোঁটা)। নরক চতুর্দশীর এই দিনটি ছোটি দিওয়ালী নামে পালিত হয় আর পরের দিন তিনি ফিরে এসেছিলেন দ্বারকায়। নরকাসুরের কবল থেকে উদ্ধার করে আনেন দেবমাতা অদিতির কর্ণকুন্ডলসহ একাধিক সামগ্রী। সেই সাথে নরকাসুর দ্বারা অপহৃত ১৬১০০ (বিষ্ণুপুরাণ) বা ১৬০০০(ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতম, কালিকাপুরাণ ) নারীকে উদ্ধার করেন তিনি এবং তাদের সন্মান রক্ষার্থে স্ত্রীর মর্যাদা দেন (শ্রীমদ্ভাগবতম)। নরকাসুরের কাহিনী বিষ্ণুপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতম, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে থাকিলেও বিস্তারিত কাহিনীর উল্লেখ পাই কালিকাপুরাণে। কারণ, কালিকাপুরাণ সম্ভবত লেখা হয়েছিল আসামে। আর নরককাসুরের কাহিনীর প্রেক্ষাপটে রয়েছে প্রাগজ্যোতিষপুর যা এখনকার আসাম।
নরকাসুরের নামের সাথে অসুর কথাটি যুক্ত থাকলেও সে কিন্তু দেবপুত্র। তার প্রকৃত নাম নরক। ভগবান বিষ্ণুর বরাহ অবতারে বরাহরূপের ঔরসে পৃথিবী গর্ভবতী হয়েছিলেন। দেবতাদের কারণে মাতা ভূমিদেবী সেই পুত্রকে দীর্ঘদিন গর্ভস্থ রেখেছিলেন। কিন্তু এমনটা বহুকাল চলার কারণে ধরিত্রীমাতার শারীরিক পীড়ন বাড়তে থাকে। তাই তিনি ভগবান বিষ্ণুর কাছে সেই পুত্র প্রসবের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। বিষ্ণু ভগবান তাকে পুত্র জন্ম দেওয়ার অনুমতি দিলেন। সাথে এও জানালেন, ১৬ বছর বয়স প্রাপ্ত হলে, তিনি সেই পুত্রকে প্রাগজ্যোতিষপুর নামক এক স্থানের রাজা নিযুক্ত করবেন। বিদেহ রাজ্যের রাজা জনক যখন ভূমিতে কর্ষন করার সময় কন্যা সীতাকে লাভ করেছিলেন, তখন ভূমি দেবী সেখানে আবির্ভূতা হলেন। তিনি জনক রাজাকে জানালেন, রাবণ বধের পর তিনি তার গর্ভস্থ পুত্রকে জন্ম দেবেন। সেই পুত্রকে লালন পালনের দায় তিনি জনক রাজাকে দিলেন। তিনি বললেন, ষোড়শ বছর বয়স অতিক্রম হলে তিনি সেই পুত্রকে নিজের সাথে নিয়ে যাবেন। ত্রেতা যুগে রাবণ বধের পর দ্বাপর যুগের শেষ ভাগে জনক রাজ সেই স্থানে গেলেন যেখানে তিনি সীতাকে পেয়েছিলেন। তিনি দেখলেন, সেখানে এক শিশুপুত্র এক মৃত মানুষের মস্তকে মাথা রেখে ক্রন্দন করছে। সেই কারণে তার নাম রাখা হল নরক। ভূমিদেবীর আদেশমত রাজা জনক সেই পুত্রকে রাজমহিষীদের হাতে সমর্পন করে যত্নে লালন পালনের আদেশ দিলেন। ভূমিদেবী ধাত্রীমাতার রূপ নিয়ে জনক রাজার গৃহে রইলেন। এইভাবে জনক রাজার আশ্রয়ে যত্নে লালিত পালিত হয়ে ষোলো বছর বয়স প্রাপ্ত হল নরক। ষোড়শবর্ষীয় বালক নরককে সাথে নিয়ে ভূমি দেবী গঙ্গাতীরে উপস্থিত হলেন। সেখানে তিনি স্বরূপ ধারণ করে নরককে তার জন্মকাহিনী শোনালেন। ভূমি মাতার প্রার্থনায় সেখানে উপস্থিত হলেন ভগবান বিষ্ণু। তিনি নরককে মনুষ্য, ব্রাহ্মণ, দেবতাদের সাথে বিরোধ করতে নিষেধ করলেন। তিনি ভূমিমাতাকে জানালেন, যদি কখনো নরককে বধের কারণ উপস্থিত হয়, তখন মাতার অনুমতি নিয়েই কোনো মনুষ্য নরককে বধ করবে। এরপর ভগবান বিষ্ণু, ভূমিমাতা ও পুত্র নরককে সাথে নিয়ে প্রাগজ্যোতিষপুরে উপস্থিত হলেন। ব্রহ্মা পূর্বে একদিন একটি নক্ষত্র এই স্থানে পরিত্যাগ করেছিলেন, তাই এই স্থানের নাম প্রাগজ্যোতিষপুর। এই স্থানে করতোয়া নামে এক গঙ্গা প্রবাহিত হচ্ছে। দেবী মহামায়া, কামাক্ষ্যা রূপে এই স্থানে উপস্থিত রয়েছেন। দেবী লক্ষ্মী সর্ব্বতোভদ্রা নামে এই পুরীতে অবস্থান করছেন। স্বয়ং ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহাদেব, চন্দ্র, সূর্য এখানে বাস করেন। ভগবান বিষ্ণু, নরককে সেই পুরীর অধীশ্বর নিযুক্ত করলেন।
ঋষি কাশ্যপ ও দিতির পুত্র ছিলেন হিরণ্যকশিপু। তার পুত্র প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদের পুত্র বলি। এই বলি রাজার পুত্র ছিলেন বান। রাজা বান, নরকের প্রিয় বন্ধু ছিলেন। শিবভক্ত বানের উপদেশে নরক বিষ্ণুর উপদেশ অমান্য করলেন এবং দেবতা, ব্রাহ্মণ, মনুষ্যদের প্রতি বিরুদ্ধ আচরণ শুরু করলেন। তিনি বিষ্ণু ও মাতা ভূমি কেও অমান্য করতে লাগলেন। এমনকি মা কামাক্ষ্যার উপাসনা বন্ধ করলেন। একদিন ঋষি বশিষ্ঠ কামাক্ষ্যা দর্শনে উপস্থিত হলেন। কিন্তু নরক তাকে কামাক্ষ্যা দর্শনের অনুমতি দিলেন না। ক্রুদ্ধ হয়ে বশিষ্ঠ অভিশাপ দিলেন, নরকের রাজ্য শ্রীহীন হবে, দেবী কামাক্ষ্যা তার মন্দির ত্যাগ করবেন। যার ঔরসে নরকের জন্ম, সেই পিতা মনুষ্যরূপে তাকে বধ করবে। বশিষ্ঠের অভিশাপে ধীরে ধীরে নরকের রাজ্য শ্রীশূন্য হল। সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি দূত মারফত খবর পাঠালেন শোনিতপুরের রাজা বন্ধু বান-কে। বান প্রাগজ্যোতিষপুরে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের এমন হতভাগ্য দশার কারণ জানতে চাইলে নরক সব ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন। বান বললেন, এসব ইন্দ্রের কারসাজি। সে দেবতা ব্যতীত কারো সুখ সহ্য করতে পারে না। স্বয়ং বিষ্ণুও ইন্দ্রের এই কাজে সাহায্য করে। তাই বানরাজ তাকে শিব বা ব্রহ্মার তপস্যা করতে বললেন। বানের পরামর্শ মত নরক ব্রহ্মার তপস্যা করলেন। তার কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তাকে বর দিতে রাজি হলেন। নরক পাঁচ বর চাইলেন, দেবতা, অসুর দ্বারা তিনি অবধ্য হবেন, তার বংশ পরম্পরা অবিচ্ছিন্ন থাকবে, অসামান্যা সুন্দরী ১৬০০০ নারী তার স্ত্রী হবে, তিনি সকলের দ্বারা অজেয় হবেন, তার সাম্রাজ্যের শ্রী, সম্পদ অফুরন্ত হবে। ব্রহ্মা তাকে এই বরগুলি প্রদান করলেন। কিন্তু এই বরের মধ্যে তিনি মনুষ্য দ্বারা অবধ্য হওয়ার বর চাইলেন না। অথচ বিষ্ণুর কথা অনুযায়ী বা বশিষ্ঠের অভিশাপ অনুসারে মনুষ্য দ্বারাই তার মৃত্যু লিখিত ছিল।
ব্রহ্মার বলে বলিয়ান হয়ে বান রাজার পরামর্শ অনুযায়ী, নরক হয়গ্রী, মুরু, বীরুপাক্ষ, সুন্দ, নিসুন্দ সহ একাধিক দানবকে তার সেনাপতি সহ দিকপতি পদে নিযুক্ত করলেন। দেব-মনুষ্য গন্ধর্ব দের ১৬০০০ সুন্দরী কন্যাদের অপহরন করে হিমালয়ের কোলে স্থাপিত এক পুরীতে বন্দী রাখলেন৷ অসুরদের সহায়তায় নরক স্বর্গ আক্রমণ করলেন। তিনি বরুণের জলধারণকারী ছত্র, দেবমাতা অদিতির কর্ণকুন্ডল সহ একাধিক মণিমাণিক্য, হাতী ঘোড়া লুঠ করলেন। তার সাম্রাজ্যে নানা ভয়ংকর অসুর জন্ম নিতে লাগল। সেই সকল অসুরদের ভারে ধরিত্রীমাতা ভীষন পীড়িত হতে লাগলেন। বাধ্য হয়ে ভূমিমাতা নরক সহ অন্যান্য অসুরদের হত্যার জন্য দেবতাদের অনুরোধ জানালেন। দেবরাজ ইন্দ্র ভগবান বিষ্ণুর মনুষ্য অবতার কৃষ্ণের কাছে নরককে বধ করার জন্য প্রার্থনা জানালেন। পূর্বে বিষ্ণু নরকের মাতা ভূমিকে আশ্বস্ত করেছিলেন, মাতার অনুমতি নিয়েই কোনো মনুষ্য নরককে বধ করবে। ইন্দ্র সেই বাক্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ধরিত্রীমাতা অসুরদের ভার সহ্য করতে না পেরে নরককে বধের অনুমতি দিয়েছেন। ইন্দ্রের বাক্যে সন্তুষ্ট হয়ে কৃষ্ণ তার অন্যতম প্রধানা মহিষী সত্যভামাকে সাথে নিয়ে বাহন গরুড়ে চড়ে প্রাগজ্যোতিষপুর আক্রমণ করলেন। সেখানে হয়গ্রীব, সুন্দ, নিসুন্দ, বীরুপাক্ষ, মুরু সহ অসুরদের বধ করলেন তিনি। মুরুকে হত্যা করে তার নাম হয় মুরারী। এরপর নরকের সাথে এক ভয়ংকর যুদ্ধে সুদর্শন চক্র দ্বারা মস্তক ছিন্ন করে নরককে হত্যা করলেন শ্রীকৃষ্ণ। উদ্ধার করলেন দেবমাতা অদিতির কর্ণকুন্ডল, বরুণের ছত্র এবং ১৬০০০ কন্যাকে। শ্রীমদ্ভাগবতম অনুসারে, সেই সকল কন্যাদের দ্বারকায় এনে তাদের নিজ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেছিলেন চতুর্দশীর দিন। পরের দিন তিনি দ্বারকায় ফিরলে দ্বারকাবাসী আনন্দ উৎসব পালন করতে থাকেন।
🙏 [তথ্যসূত্রঃ কালিকাপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতম, বিষ্ণুপুরাণ ]
🖋️লেখায়ঃ www.facebook.com/PrasenjitMythology
© Knowledge Tree Education
(ছবিটি সংগৃহীত)
সাথে থাকুনঃ
🔴 Youtube👉 www.youtube.com/KNOWLEDGETREEIndia
🔴Facebook 👉 Knowledge Tree Education
🔴I nstagram👉 www.instagram.com/knowledge.tree.education
🔴 Twitter👉 www.twitter.com/KnowledgeTreeIn
#Email👉 mail2knowledge.tree@gmail.com
#knowledgeTreeEducation
🔴 Read more: https://prasenjitmythology.blogspot.com
https://knowledgetreeindia.blogspot.com
Comments
Post a Comment