হাওড়ার আন্দুলের পুঁইল্যার একটি সার্বজনীন দূর্গোৎসব অনুষ্ঠানে দেবী দূর্গার এক অন্য রূপ পূজিত হয়। শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পদতলে আরাধনায় বসে নিজের চক্ষুদানের উদ্দেশ্যে নিজ চক্ষুতে তীরবিদ্ধ করতে উদ্যত হয়েছেন। বামদিকে পবনপুত্র হনুমান, ডানদিকে লক্ষ্মণ রয়েছেন। আজ আপনাদের সেই কাহিনীটি বলব। শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধের উদ্দেশ্যে মাতা শ্রী শ্রী চন্ডীর উপাসনা করেছিলেন। এই কাহিনী আমরা পাই কৃত্তিবাসী রামায়ণে। শ্রী কৃত্তিবাস ওঝা রচিত রামায়ণের লঙ্কাকান্ডে এই কাহিনীটি বিস্তারিত রয়েছে। রামের সাথে যুদ্ধে রাবণ দারুণভাবে হেনস্তা হচ্ছেন। তার আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব তাকে ত্যাগ করেছেন। উপায় না দেখে রাবণ দেবী অম্বিকাকে আহ্বান করলেন। রাবণের প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে দেবী অম্বিকা রাবণের রথে অধিষ্ঠিতা হলেন। রাবণের রথে মাতা অম্বিকাকে দেখে রামচন্দ্র সশ্রদ্ধ প্রণাম করলেন। দেবীকে রাবণের রথে দেখে রামচন্দ্র, লক্ষ্মণ, হনুমান, বিভীষণ সহ সকল দেবতাগণ বিচলিত হলেন। সেই সময় দেবরাজ ইন্দ্র শ্রীরামচন্দ্রকে দেবী চন্ডীর আরাধনা করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তখন দক্ষিনায়ণ চলছে, কন্যারাশি মাস, শুক্লাপক্ষ। এই সময় দেবীর আরাধনার উপযুক্ত সময়...
কুশধ্বজ নামে এক রাজার কন্যা ছিলেন বেদবতী। বেদবতী রাবণ দ্বারা অপমানিত হয়ে নিজের আত্মত্যাগ করেন এবং মৃত্যুর আগে রাবণকে অভিশাপ দিয়ে যান, পরজন্মে বেদবতীই রাবণের বিনাশের কারণ হবেন। পরজন্মে বেদবতী সীতা রূপে জন্ম নেন। কুশধ্বজের ভাই ধর্মধ্বজের কন্যা ছিলেন তুলসী। তুলসী ছিলেন অসুররাজ শঙ্খচূড়ের স্ত্রী। শঙ্খচূড় পূর্বজন্মে শ্রীকৃষ্ণ সখা সুদামা ছিলেন। রাধার অভিশাপে তিনি অসুররূপে জন্মলাভ করেছেন। শঙ্খচূড় মহাদেবের তপস্যা করে এক কবজ লাভ করেছিলেন, যা তার দেহে যতক্ষন থাকবে, ততক্ষণ শঙ্খচূড় দেবতাগণের দ্বারা অজেয় থাকবেন। এছাড়া শঙ্খচূড়ের স্ত্রী তুলসী যতক্ষণ পবিত্রতা বজায় রাখবেন, তার স্বামী ততক্ষন সমস্ত বিপদমুক্ত থাকবেন। অজেয় শঙ্খচূড় দ্বারা বিতাড়িত হয়ে দেবতাগণ মহাদেব ও বিষ্ণুর সাহায্য প্রার্থনা করলেন। বিষ্ণু-প্রদত্ত শূল দ্বারা শিব শঙ্খচূড়ের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। সেই সময় বিষ্ণু শঙ্খচূড়ের রূপ ধারণ করে তুলসীর কাছে গেলেন এবং তার পবিত্রতা নষ্ট হয়। এরপর ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ নিয়ে শঙ্খচূড়ের সন্মুখে উপস্থিত হলেন বিষ্ণু। তার কাছে ভিক্ষাস্বরূপ সেই কবজ চাইলেন। ব্রাহ্মণের কথামত শঙ্খচূড় সেই কবজ ব্রাহ্মণকে দান করলেন। এ...
চন্দ্রাবতীর জীবনীঃঃ “ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়/ বসতি যাদবানন্দ করেন তথায়।। ভট্টাচার্য্য বংশে জন্ম অঞ্জনা ঘরণী/ বাঁশের পাল্লায় তাল-পাতার ছাউনী।। বাড়াতে দারিদ্র-জ্বালা কষ্টের কাহিনী/ তার ঘরে জন্ম নিলা চন্দ্রা অভাগিনী।। সদাই মনসা-পদ পূজি ভক্তিভরে/ চাল-কড়ি কিছু পাই মনসার বরে।। শিব-শিবা বন্দি গাই ফুলেশ্বরী নদী/ যার জলে তৃষ্ণা দূর করি নিরবধি।। বিধিমতে প্রণাম করি সকলের পায়/ পিতার আদেশে চন্দ্রা রামায়ণ গায়।।” স্বরচিত রামায়ণের ভূমিকায় চন্দ্রাবতী নিজের আত্মপরিচয় দিয়েছেন এভাবেই। কাব্যের কথা নয়। চন্দ্রাবতী আসলেই অভাগিনী। তার জীবনে যে বেদনাবিধুরতা এসেছে, যে সকরুণতা এসেছে, তা খুব কম মানুষের জীবনেই এসে থাকে। অত্যন্ত করুণভাবে তরুণ বয়সেই সমাপ্তি ঘটেছে এই কবির জীবনের। নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ করুণ জীবনের কারণে পালা রচয়িতা থেকে নিজেই হয়ে উঠেছেন পালাগানের করুণরসে সিক্ত শোকাচ্ছাদিত নায়িকা। চন্দ্রাবতী মধ্যযুগের উল্লেখযোগ্য কবিদের মধ্যে অন্যতম এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম বাঙালি নারী কবি৷ এই বিদূষী নারী অন্যান্য কাব্য ছাড়াও পিতার আদেশে বাংলা ভাষায় রামায়ণ রচন...
Comments
Post a Comment