বোতান দোরো: জাপানের ভূতের গল্প
🏮#রাতের_লন্ঠন [জাপানের বিখ্যাত লোককথা 'বোতান দোরো' (Botan Dōrō এর কাহিনী অবলম্বনে]
একদা জাপানের এক শহরে ওগিয়ারা শিনোজো নামে এক সামুরাই যোদ্ধা ছিল। তার বীরত্বের খ্যাতি জাপানে ছড়িয়ে পড়েছিল। এত বিখ্যাত, নাম, প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও তার মনে সুখ ছিল না। বিবাহের কয়েক বছরের মধ্যেই এক কঠিন রোগে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সেই শোকযন্ত্রনা সর্বদা বহন করে বেড়াতো সে।
এই ভাবে দিন কাটছিল তার। একবার অবন মাসে সেই সামুরাই তার গ্রামের দেশে এল। সেই গ্রামেই ছিল তার মা-বাবা এবং পূর্বপুরুষের সমাধি। অবন মাসে নাকি স্বর্গ থেকে মৃত পূর্বপুরুষের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে। তাদের আত্মার শান্তি কামনায় সেই সামুরাই গ্রামে নানা পূজা আয়োজন করল যাতে পূর্বপুরুষের আত্মা আবার স্বর্গে ফিরে যেতে পারে৷ সারা দিন নানা প্রার্থনা-রীতি রেওয়াজ সেরে সন্ধ্যা বেলায় ওগিয়ারা ঘরে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল। বাইরে তখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। ঠিক এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ হল। "এই অসময়ে কে এল?" ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল সেই সামুরাই। দেখল, এক যুবতী নারী দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে। পরণে বেশ দামী পোশাক। পাশে লন্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে তার চাকরানী। আমার ওতসুয়ু। আর ও আমার চাকরানী। আমরা এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাতের অন্ধকারে পথ হারিয়েছি। তাই আপনার কাছে রাতটুকুর জন্য আশ্রয় চাইছি।"
ভিতরে আসুন" বলল সেই সামুরাই। ঘরের ভিতরের আলোয় এবার সেই মহিলার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কি অপরূপ সৌন্দর্য্য! চোখ ফেরানো যাচ্ছে না! প্রথম দর্শনেই সেই নারীর রূপে মুগ্ধ হল ওগিয়ারা।এরপর তারা একসাথে রাতের খাওয়া দাওয়া করল। সারাদিনের ক্লান্তিতে চাকরানীটি মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আর সেই ওগিয়ারা এবং ওতসুয়ু সারা রাত গল্প করেই কাটালো। ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে, এমন সময় মেয়েটি বলল, "এবার আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে। আমরা তবে আসি।" ওগিয়ারা বলল, "আবার কি আমাদের দেখা হবে?"
যদি আপত্তি না থাকে, কাল সন্ধায় আমরা আবার আসব"। মেয়েটি বলল।
ওগিয়ারা মনটা আনন্দে নেচে উঠল "অপেক্ষায় থাকব।"
এবার তারা বিদায় নিল।
সারা দিন ওগিয়ারা অপেক্ষায় রইল কখন সন্ধা নামবে।
সন্ধ্যা বেলায় আবার সেই মেয়েটি এল। সাথে তার চাকরানীটি এল।ওগিয়ারা ও ওতসুয়ু আজও সারারাত গল্প করে কাটালো। ভোরবেলা তারা চলে গেল।
এইভাবে বেশ কয়েক রাত চলল। বিষয়টা প্রতিবেশীদের নজর এড়ালো না। তাদের মনে কেমন একটা সন্দেহ হল। একদিন রাত্রে এক বৃদ্ধ প্রতিবেশী ওগিয়ারা-র জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল ভিতরে কি চলছে। যা দেখল, তাতে ভয়ে বুক শুকিয়ে গেল তার। ওগিয়ারা বিছানায় শুয়ে আছে। তার বাহু যুগলে আবন্ধ রয়েছে এক নারী! না, না, নারী না! এতো একটা কঙ্কাল। ভয়ে দৌড়ে পালাল সে। পরের দিন সেই বৃদ্ধ গেল এক বৌদ্ধ সাধুর কাছে। সব ঘটনা শুনে সেই সাধু এক মন্ত্র পুত জল দিল। বলল, এই জল, ওগিয়ারার ঘরের ভিতরে রাখতে। তাহলে সেই আত্মা আর ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না। আর রাতের বেলা ঘরের বাইরে যেই ডাকুক, ওগিয়ারা যেন বাইরে না আসে।
বৃদ্ধ প্রতিবেশী সেই মন্ত্রপুত জল নিয়ে গেল সামুরাই এর বাড়ি। সামুরাইকে রাত্রে যা দেখেছে সেই ঘটনা বলল সে। তারপর সাধুর কথা মত সেই জল সামুরাই-এর ঘরের ভিতরে রেখে দিল। "আজ রাত্রে ভুল করেও ঘরের বাইরে বেরোবে না, যে যতই ডাকুক, একদম না। আর কাল সকাল হলেই তুমি শহরে ফিরে যেও।" সাবধান করল সেই বৃদ্ধ। সে রাত্রে কেউ সামুরাই এর বাড়ির আশেপাশে যাওয়ার সাহস করল না। ওগিয়ারা বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল। বৃদ্ধের কথা বিশ্বাস করবে না করবে না- এই নিয়ে বেশ দোটানায় ছিল সে। এমন সময় দরজায় টোকা শুনল। সামুরাই দরজা খুলল না। চুপ করে বসে রইল ঘরের ভিতর।আবার ঠকঠক শব্দ! তাও ওগিয়ারা দরজা খুলল না। এবার সে নারী বলে উঠল," দরজাটা খোলো প্রিয়, আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচব না! তোমায় আমি খুব ভালোবাসি! একবারটি দরজা খোলো!" আর নিজেকে সামলাতে পারল না ওগিয়ারা। দরজা খুলে দিল সে। সেদিনও সেই মেয়েটির সাথে লন্ঠন হাতে তার চাকরানী এসেছে।
"আজ আর ঘরে গল্প করব না! চলো ওই পাহাড়ের চূড়ায়! আজ সারা রাত আমরা ওখানেই গল্প করব!"
ওগিয়ারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল।
পরের দিন ভোর হল। প্রতিবেশীরা জড়ো হল সামুরাই এর ঘরের সামনে। দেখল, ঘরের বাইরে পড়ে রয়েছে সামুরাই এর নিথর দেহ। পাশে বসানো আছে একটা লন্ঠন। তখন নেভেনি সেটা।
🖋️ Prasenjit Adak
#botandoro #japanese #folklore #banglagolpo #folktales #devkahini
Comments
Post a Comment