মহাভারত অনুসারে কোন ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা উচিত
"সদা সত্য কথা বলিবে" বিদ্যাসাগরমশাইয়ের বর্ণপরিচয়ে লেখা এই বাক্য কেউ মেনে চলুক বা না চলুক, শৈশবে পড়েনি এমন লোক কম! সত্য কথা বলার উপদেশ প্রাচীন কাল থেকেই বলা হয়ে আসছে। হাজার বছর আগে সত্যের জয়গাথা লেখা হয়েছে মুন্ডক উপনিষদে: "সত্যমেব জয়তে"। সত্যের পথ অবলম্বনকে প্রকৃত ধর্ম বা কর্তব্য বলা হয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে। প্রাচীনযুগের মুণি-ঋষি থেকে শুরু করে বর্তমান কালের পন্ডিতরাও এই একই উপদেশ দিয়েছেন। তবে ব্যতিক্রমও আছে। পারদ তরল হলেও ধাতু এটা যেমন ব্যতিক্রম, তেমনি মিথ্যা বললেও তা ধর্মপালন এই ব্যতিক্রমী উপদেশ রয়েছে মহাভারতে। তবে, সেটা অবশ্যই সব ক্ষেত্রে নয়, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে। মহাভারতে দুই জায়গায় এমন পাঁচটি বিশেষ অবস্থার কথা বলা আছে, যেসব ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নিলে সেটা শাস্ত্রসম্মত হয়, তাতে কোনো পাপ হয় না।
মহাভারতের আদিপর্বে রয়েছে যযাতি, দেবযানীর কাহিনী। চন্দ্রবংশীয় রাজা যযাতির সাথে বিবাহ হয় শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী। দেবযানীর দাসী শর্মিষ্ঠা। দেবযানীর বিবাহের পর শর্মিষ্ঠা যযাতিকে স্বামী রূপে পেতে চাইলেন, যযাতি হোক তার সন্তানের পিতা। কিন্তু তিনি যখন যযাতিকে সন্তান দানের প্রার্থনা করলেন, তখন যযাতি সেই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। কারণ, তিনি বিবাহিত এবং দেবযানী তার স্ত্রী। দেবযানী ব্যতীত অন্য কোনো নারীর সাথে তিনি মিলিত হবেন না এমন প্রতিজ্ঞা তিনি করেছেন শুক্রাচার্যের কাছে। একথা শুনে শর্মিষ্ঠা যযাতির উদ্দেশ্যে বলছেন,
"ন নর্মযুক্তং বচনং হিনস্তি
ন স্ত্রীষু রাজন ন বিবাহকালে।
প্রাণ্যাত্যয়ে সর্বধনাপহারে
পঞ্চনৃত্যান্যাহুরপাতকানি।।"
অর্থাৎ, পরিহাসে, স্ত্রীলোকের মনোরঞ্জনে, বিবাহকালে, প্রাণসংশয়ে, সর্বস্ব নাশের আশঙ্কায় - এই পাঁচ অবস্থায় মিথ্যা বললে পাপ হয় না।
আবার মহাভারতের কর্ণপর্বেও এমনি পাঁচ পরিস্থিতির উল্লেখ আছে। একবার অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদি কেউ তাকে গান্ডীব ত্যাগ করার কথা বলেন, তাহলে তাকে তিনি হত্যা করবেন। কর্ণের সাথে যুদ্ধে অর্জুন পর্যুদস্ত হওয়ায় যুধিষ্ঠির তাকে তিরস্কার করে গান্ডীব ত্যাগ করার কথা বললেন। প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে সত্য পালনের জন্য অর্জুন যখন যুধিষ্ঠিরকে হত্যা করতে এলেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তিরস্কার করে বললেন, " সত্য বলাই ধর্মসংগত, সত্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কিছু নেই। কিন্তু যেখানে মিথ্যা সত্যতুল্য হিতকর এবং সত্য মিথ্যাতুল্য অহিতকর, সেখানে মিথ্যা বলাই উচিত।
"বিবাহকালে রতিসম্প্রয়োগে
প্রানাত্যয়ে সর্বধনাপহারে।
বিপ্রস্য চার্থে হ্যনৃতং বদেত
পঞ্চনৃত্যান্যাহুরপাতকানি।।"
অর্থাৎ, বিবাহকালে, রতিসম্বন্ধে, প্রাণ রক্ষায়, সর্বস্বনাশের সম্ভাবনায়, ব্রাহ্মণের উপকারে মিথ্যা বললে পাপ হয় না।
নিষ্ঠুর, নিদারুণ কর্ম করেও পুণ্যলাভ করা যায়। আবার ধর্মপ্রাণ মানুষ সত্য পালন করেও মহাপাপগ্রস্ত হন। তাই সকল ক্ষেত্রে সত্য অনুসারে কর্ম করা উচিত কিনা, সেটা নির্ধারন করা বেশ কঠিন।
🖋️ Prasenjit Mythology © Dev Kahini youtube.com/@devkahini
#purankatha #devkahini #mahabharat #mythology #indianmythology #ancienthistory #krishnavani #krishnaquotes #krishnaconsciousness #sanatandharma #hinduism #hindugods #hindumythology #sanatanihindu #sanatan #puran #prasenjitmythology
লেখা টা দারুন দাদা।। © সুপ্রতিম।
ReplyDelete